জিভে জল আনা লুচি আর আলুর দম তৈরির রেসিপি

লুচি আলুর দম

লুচি আর আলুর দম – এই দুটি নাম একসঙ্গে শুনলেই বাঙালির মনটা যেন ‘আহা’ করে ওঠে। সকালের জলখাবার হোক বা রাতের বিশেষ ডিনার, গরম লুচি আর তার সঙ্গে আলুর দম এক অসাধারণ জুটি। আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি এই লুচি আর আলুর দমের একদম পারফেক্ট রেসিপি। খুব সহজে, ধাপে ধাপে, জেনে নিন কীভাবে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলবেন দোকানের মতো নরম ফুলকো লুচি আর স্বাদে ভরপুর আলুর দম।

ফুলকো লুচি তৈরির সহজ পদ্ধতি

লুচি বানানো যতটা সহজ মনে হয়, অনেক সময় তার চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক টিপস না জানলে লুচি ফুলবে না, অথবা নরম হবে না। এখানে দেওয়া প্রতিটি ধাপ ভালোভাবে অনুসরণ করলে আপনার লুচিও হবে একেবারে পারফেক্ট।

উপকরণ

  • ময়দা : ২ কাপ
  • তেল বা ঘি (ময়ানের জন্য) : ৪ টেবিল চামচ
  • তেল (ভাজার জন্য) : পরিমাণমতো (ডুবো তেলে ভাজার জন্য)
  • পানি : ১/২ কাপ বা প্রয়োজন মতো
  • লবণ : স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালী

১. ময়ান তৈরি : একটি বড় পাত্রে ময়দা নিন। তার মধ্যে ৪ টেবিল চামচ তেল বা ঘি এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে দিন। এবার এই তেল আর লবণ খুব ভালোভাবে ময়দার সঙ্গে মিশিয়ে নিন। হাতের আঙুল দিয়ে ময়দা এমনভাবে ঘষুন যাতে প্রতিটি কণার সঙ্গে তেল মিশে যায়। এই প্রক্রিয়াকে ময়ান দেওয়া বলে। ময়ান যত ভালো হবে, লুচি তত নরম হবে।

২. ডো তৈরি : অল্প অল্প করে পানি দিয়ে ময়দা মেখে একটি নরম ডো তৈরি করুন। ডোটি যেন খুব বেশি শক্ত বা নরম না হয়। মাখা হয়ে গেলে এটি একটি ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে অন্তত ১০-১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এতে ময়দা নরম হবে এবং লুচি বানাতে সুবিধা হবে।

৩. লেচি কাটা ও বেলা : ময়দা থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে নিন। প্রতিটি লেচি যেন একই আকারের হয়। এবার একটি বেলন চাকিতে সামান্য তেল মাখিয়ে নিন। লেচিতেও একটু তেল মাখিয়ে পাতলা করে বেলে নিন। লুচি খুব বেশি মোটা বা খুব বেশি পাতলা করে বেলবেন না।

৪. ভাজা : একটি কড়াইতে ডুবো তেলে লুচি ভাজার জন্য তেল গরম করুন। তেল ভালোভাবে গরম হলে আঁচ মাঝারি করে দিন। লুচি তেলে ছাড়ার পর হালকা হাতে খুন্তি দিয়ে একটু চাপ দিন। এতে লুচি ফুলে উঠবে। লুচি ফুলে উঠলে উল্টে দিন এবং কয়েক সেকেন্ড ভেজে লুচি সাদা থাকা অবস্থাতেই তুলে নিন। বেশি লাল করবেন না, তাহলে লুচি শক্ত হয়ে যাবে।

সুস্বাদু আলুর দম তৈরির রেসিপি

আলুর দম তৈরির মূল রহস্য লুকিয়ে আছে তার মসলার মিশ্রণে। সঠিক পরিমাণে মসলা ব্যবহার করলে আর তা ভালোভাবে কষালে আলুর দমের স্বাদ অতুলনীয় হবে।

উপকরণ

  • ছোট আলু : ২৫০ গ্রাম
  • সর্ষের তেল : ৫০ মিলিলিটার
  • পেঁয়াজ বাটা (সেদ্ধ করে বাটা) : ২০০ গ্রাম
  • আদা ও রসুন বাটা : ৫০ গ্রাম
  • টমেটো পিউরি : ২৫ মিলিলিটার
  • কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুঁড়ো : ১/২ চা-চামচ (রঙের জন্য)
  • হলুদ গুঁড়ো : ১ চা-চামচ
  • জিরা গুঁড়ো : ২ চা-চামচ
  • লবণ : স্বাদমতো
  • গরম মসলা গুঁড়ো : ১ চা-চামচ
  • তেজপাতা : ১টি
  • জল : ১ কাপ বা প্রয়োজন মতো

প্রস্তুত প্রণালী

১. আলু প্রস্তুতি : ছোট আলুগুলো খোসা ছাড়িয়ে সামান্য লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। আলুগুলো যেন সম্পূর্ণ সেদ্ধ না হয়, একটু শক্তভাব থাকা উচিত। সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে রাখুন।

২. মসলা কষানো : একটি কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করুন। তেল থেকে ধোঁয়া বের হওয়া শুরু করলে তেজপাতা দিয়ে দিন। এরপর সেদ্ধ করে বেটে রাখা পেঁয়াজ দিন এবং সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

৩. আদা-রসুন ও মসলা : পেঁয়াজ সোনালি হয়ে এলে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। কাঁচা গন্ধ চলে গেলে জিরা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো এবং কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুঁড়ো অল্প জল দিয়ে গুলে কড়াইতে দিয়ে দিন।

৪. টমেটো ও কষানো : এবার টমেটো পিউরি মেশান। মসলা ততক্ষণ কষাতে থাকুন যতক্ষণ না মসলা থেকে তেল আলাদা হয়ে আসে। এই ধাপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মসলা যত ভালোভাবে কষানো হবে, তরকারির স্বাদ তত বাড়বে।

৫. রান্না : কষানো মসলার মধ্যে সেদ্ধ করা আলুগুলো দিয়ে দিন। আলুর সঙ্গে মসলা ভালোভাবে মিশিয়ে সামান্য জল দিয়ে দিন। লবণ দিয়ে ঢাকা দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। আলু সম্পূর্ণ সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

৬. শেষ ছোঁয়া : ঝোল গা মাখা মাখা হলে এবং আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে গরম মসলা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। আঁচ বন্ধ করে দিন এবং কিছুক্ষণের জন্য ঢাকা দিয়ে রাখুন। এতে গরম মসলার সুগন্ধ তরকারির মধ্যে ভালোভাবে মিশে যাবে।

সবশেষে, গরম গরম ফুলকো লুচির সঙ্গে এই স্বাদে ভরা আলুর দম পরিবেশন করুন। দেখুন, সকলের মুখে কেমন হাসি ফোটে!