
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি সাময়িক আরাম দিলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
১. হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করলে হৃৎপিণ্ডের গতি কমে যেতে পারে। আমাদের শরীরের ভেগাস নার্ভ হৃৎস্পন্দনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঠাণ্ডা পানি পান করলে এই ভেগাস নার্ভ উদ্দীপিত হয়, যার ফলে হার্ট রেট কমে যায়। এটি বিশেষ করে হৃদরোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
২. গলা ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ
ঠাণ্ডা পানি সরাসরি গলা এবং শ্বাসযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। গরম শরীর নিয়ে হঠাৎ ঠাণ্ডা পানি পান করলে গলায় ব্যথা, সর্দি-কাশি এবং টনসিলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি শ্বাসযন্ত্রে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি করে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা দেয় এবং ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যাদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই অভ্যাসটি খুবই ক্ষতিকর।
৩. মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা বৃদ্ধি
যারা মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ঠাণ্ডা পানি পান করা ঝুঁকিপূর্ণ। ঠাণ্ডা পানি পান করলে মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে যায়, যা মাইগ্রেন বা মাথাব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৪. হজম প্রক্রিয়ায় বাধা
ঠাণ্ডা পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। আমাদের শরীর যখন গরম থাকে, তখন ঠাণ্ডা পানি পান করলে পাকস্থলীর রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এতে করে খাবার হজম হতে বেশি সময় লাগে এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে। বিশেষত তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানি পান করলে ফ্যাট বা চর্বি সহজে গলতে পারে না, যা হজমের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
৫. দাঁতের ক্ষতি
ঠাণ্ডা পানি দাঁতের এনামেল বা বাইরের কঠিন আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গরম থেকে হঠাৎ ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে এলে দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়, যা এনামেলে ছোট ফাটল তৈরি করতে পারে। এর ফলে দাঁতে শিরশিরানি বা সংবেদনশীলতা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৬. পানিশূন্যতার ঝুঁকি
অনেকের ধারণা, ঠাণ্ডা পানি দ্রুত তৃষ্ণা মেটায়, ফলে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। ঠাণ্ডা পানি দ্রুত তৃষ্ণা কমালেও শরীর আসলে পর্যাপ্ত পানি শোষণ করতে পারে না। এর ফলে শরীর ভুল সংকেত পায় এবং মনে করে যে তার আর পানির প্রয়োজন নেই, যা শেষ পর্যন্ত পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে।
পরামর্শ
গরমে সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান অপরিহার্য, তবে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা হালকা ঠাণ্ডা হওয়া উচিত। বাইরে থেকে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি পান না করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া, পানিশূন্যতা রোধ করতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান নিশ্চিত করুন। এর পাশাপাশি ডাবের পানি, তাজা ফলের রস বা লেবুর শরবত পান করতে পারেন।
